২০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

EN

সরাইল ফতেহপুরে গোপনে বসত বাড়ি ক্রয়কে কেন্দ্র করে দুই পক্ষে উত্তেজনা, সংঘর্ষের আশংকা

বার্তা সম্পাদক

প্রকাশিত: ৪:২৩ অপরাহ্ণ , ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২১, বুধবার , পোষ্ট করা হয়েছে 3 years আগে

সরাইল ফতেহপুরে গোপনে বসত বাড়ি ক্রয়কে কেন্দ্র করে দুই পক্ষে উত্তেজনা, সংঘর্ষের আশংকা

এম এ করিম সরাইল নিউজ ২৪.কমঃ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার পাকশিমুল ইউনিয়নের ফতেহপুর গ্রামে গোপণে বাড়ি ক্রয়কে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের লোকজনের মাঝে উত্তেজনা বিরাজ করছে। এক পক্ষের বাড়ি দখলের প্রস্তুতি ও অপর পক্ষের বাধাঁদানকে কেন্দ্র করে যেকোনো সময় দুই পক্ষের মধ্যে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের আশংকা করছেন এলাকাবাসী।
সরজমিনে ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, ফতেহপুর গ্রামের মৃত করিম বক্সের একই দাগের জায়গায় তার তিন পুত্রের মধ্যে দক্ষিণ ভিটেবাড়িতে বড় পুত্র হাজী কোরবাণ আলী, মধ্যে আলী আফজল ও উত্তরে মিন্নত আলী পৈত্রিক সূত্রে বসত বাড়ি নির্মাণ করে পারিবারিক সম্প্রীতি বজায় রেখে বসবাস করে আসছেন।
করিম বক্সের ছোট পুত্র মিন্নত আলীর শুশুর বাড়ি খাগড়াছড়ি জেলায়। ব্যবসা করার সুবাধে মিন্নত আলী পরিবার-পরিজন নিয়ে সেখানে নতুন করে বসতি স্থাপন করার কারনে পৈত্রিক ভিটে ও বসতবাড়ি বিক্রি করে খাগড়াছড়ি চলে যাওয়ার জন্য বাড়িটি বিক্রি করার চেষ্টা করছেন।

মিন্নত আলীর আপন ভাই ও ভাতিজাগণ স্থানীয় এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে সাথে নিয়ে মিন্নত আলীর ৬ শতাংশ ভিটেবাড়ি ও বসতঘরের মূল্য ২০ লক্ষ টাকা নির্ধারণ করে স্থানীয় শালিশকারক হাজী লাবু মিয়ার নিকট ৪ লক্ষ ২০ হাজার টাকা বায়না জমা দেন। পরবর্তীতে বাকী টাকা সংগ্রহের জন্য তারা নানাভাবে প্রচেষ্টা চালান। এরই মধ্যে একই এলাকার প্রভাবশালী ও বিত্তশালী আব্দুস সাত্তার নামের এক ব্যক্তি ২৭ লক্ষ টাকা দিয়ে মিন্নত আলীর ৬ শতাংশ জায়গাসহ বসত বাড়িটি ক্রয় করেছেন বলে অভিযোগ উঠে।

এ নিয়ে মিন্নত আলীর আপন ভাই ও ভাতিজাগণের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করতে থাকে। এক পর্যায়ে এ বিষয়ে সামাজিকভাবে কয়েক দফা শালিশ বৈঠক হয়। শালিশ বৈঠকে বাড়িটি মিন্নত আলীর আপন ভাই ও তাদের ভাতিজাগণ ক্রয় করার সিদ্ধান্ত হয়। সেই মোতাবেক মিন্নত আলীর ভাই ও ভাতিজাগণ স্থানীয় শালিশকারক হাজী লাবু মিয়ার নিকট দুই দফায় ১৫ লক্ষ টাকা ও মিন্নত আলীর নিকট ১লক্ষ ২০ হাজার টাকা বায়না বাবদ জমা দেন।
এদিকে শালিশের সিদ্ধান্তকে অমান্য করে একই এলাকার আব্দুস সাত্তার বাড়ির মালিক মিন্নত আলীকে ফুসঁলিয়ে ২৭ লক্ষ টাকা দিয়ে ভিটেসহ উক্ত বাড়িটি গোপনে ক্র‍য় করে দলিল করে নেন। এতে করে ফতেহপুর গ্রামের স্থানীয় শালিশকারক হাজী লাবু মিয়া, হাজী ওমর আলী, হাজী আব্দুল জব্বার, হাজী সায়েদ মিয়াসহ এলাকার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে এলাকার সাহেব সর্দারদের অনুরোধ অমান্য করে জায়গাসহ বাড়িটি ক্রয় করে সংঘাতময় পরিস্থিতি সৃষ্টি করার জন্য আব্দুস সাত্তারকে দায়ি করেন।

এ ব্যপারে মিন্নত আলীর ভাতিজা মোঃ মাসুদ হোসেন বলেন, আমার আপন চাচার বাড়ি আমরা ক্রয় করার জন্য এলাকার সাহেব সর্দারদের নিয়ে মূল্য নির্ধারণ করে টাকা বায়না করেছি। বাকী টাকা সংগ্রহের চেষ্টা করতেছি। মধ্যে দিয়ে আরেক বাড়ির আব্দুস সাত্তার নামে একজন এসে বাড়িটি ক্রয় করার নামে একটি দ্বন্দ্বের সৃষ্টি করেছে। শুনেছি আব্দুস সাত্তার বাড়িটি জোরপূর্বক দখল করতে আসবেন। আমরাও আমাদের চাচার বাড়ি দখল হতে দেব না। এতে যে কোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য আব্দুস সাত্তারই দায়ী থাকবেন।

এ ব্যপারে মিন্নত আলী বলেন, আমার বাড়িটি বিক্রি করার জন্য কয়েকমাস ধরে চেষ্টা করতেছি। কিন্তু আমার ভাই ও ভাতিজারা বাড়িটি কিনার নামে কেবল সময় ক্ষেপন কতেছে। তাই আমি আমার বাড়িটি আব্দুস সাত্তারের নিকট বিক্রি করে দিয়েছি। আমার এখন আর কিছু করার নেই।
এ ব্যপারে আন্দুস সাত্তার বলেন, ৬/৭ মাস ধরে মিন্নত আলী তার ভাই ও ভাতিজাদের কাছে বাড়িটি বিক্রি করার জন্য ঘুরেছে। কিন্তু তারা বাড়িটি কিনেন নি। তাই আমি ন্যায্যমূল্য দিয়ে বাড়িটি কিনেছি।

এ ব্যপারে স্থানীয় শালিশ কারক হাজী লাবু মিয়া বলেন, মিন্নত আলীর আপন ভাই ও ভাতিজারা বাড়িটি ক্রয় করার জন্য এলাকার সকলকে নিয়ে দাম দর করে বাড়িটি ক্রয় করা বাবদ আমার কাছে কিছু টাকা বায়না হিসেবে জমা করেছে। ধার দেনা ও সম্পদ বিক্রি করে বাকী টাকা তারা সংগ্রহের চেষ্টা করতেছে। এ অবস্থায় আব্দুস সাত্তার বাড়িটি কিনা ঠিক হয়নি। আমাদের অনুরোধ অমান্য করে বাড়িটি কিনে আব্দুস সাত্তার একটি দ্বন্দ্বের সৃষ্টি করেছে। আমরা এলাকার লোকজন ন্যায়ের পক্ষে আছি, আব্দুস সাত্তারের এ অন্যায়ের পক্ষে আমরা নেই।
এ ব্যপারে পাকশিমুল ইউপি চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম বলেন, মিন্নত আলীর আপন ভাতিজাদের নিকট জায়গা বিক্রির জন্য বায়নার টাকা নিয়েও পার্শ্ববর্তী বাড়ির সাত্তার মিয়ার নিকট বাড়ি বিক্রি করে দিয়েছেন বিষয়টি পরস্পরের মাধ্যমে আমি জানতে পেরেছি। তবে কোন পক্ষই এখন পর্যন্ত আমাকে আনুষ্ঠানিক ভাবে কোনকিছু জানাননি।
এদিকে মিন্নত আলীর ভাই ও ভাতিজাগণ অভিযোগ করে বলেন গত মঙ্গলবার সন্ধায় আব্দুস সাত্তারের লোকজন সরাইল থানার এসআই রায়হানের উপস্থিতিতে বাড়িটি দখলে নেওয়ার চেষ্টা চালায়।
এ ব্যপারে সরাইল থানার এসআই রায়হান বলেন, ৯৯৯ নাম্বার কলে ফতেহপুর এলাকায় একবৃদ্ধা ঘরবন্ধী জানতে পেরে সেখানে গিয়ে মিন্নত আলি নামে এক বৃদ্ধাকে উদ্ধার করে তার চাচাত ভাতিজা শফিকের নিকট রেখে আসি এবং ঐ ঘর তালাদিয়ে শফিকের কাছে চাবি দিয়ে আসি।

আপনার মন্তব্য লিখুন

আর্কাইভ

April 2024
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930  
আরও পড়ুন