১৫ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ৩১শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

EN

সরাইলে রঙ্গীন টাইলসে সজ্জিত কথিত মাজার নেশাখোরদের নতুন আস্তানা, এ যেন বাস্তব লালসালু উপন্যাস, এলাকার জনমনে চাপা ক্ষোভ

বার্তা সম্পাদক

প্রকাশিত: ৯:৪৪ পূর্বাহ্ণ , ৬ আগস্ট ২০১৮, সোমবার , পোষ্ট করা হয়েছে 7 years আগে

20180806_05282020180806_053542

এম এ করিম সরাইল নিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম ডেস্ক:

ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলার সদর ইউনিয়নের সৈয়দটুলা পশ্চিমপাড়া কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ ও সৈয়দটুলা পশ্চিমপাড়া নূরানী হাফিজিয়া মাদ্রাসার পাশে গড়ে উঠা রঙ্গীন টাইলসে সজ্জিত কথিত মাজার এখন নেশাখোরদের নতুন আস্তানা। সৈয়দ ওয়ালী উল্লাহর “লালশালু” উপন্যাসের ভন্ড মজিদ কর্তৃক কথিত মাজার ব্যবসার কাহিনীর বাস্তব চিত্র এখানে ফুটে উঠেছে। সারোয়ার হোসেন নামে ঐ এলাকার এক যুবক এখানে লালসালু উপন্যাসের সেই মজিদের ভূমিকায় রয়েছেন বলে জানা গেছে। সরজমিনে এলাকা ঘুরে ও স্থানীয় লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, সরাইল বাজার থেকে সৈয়দটুলা গ্রামে প্রবেশের প্রধান ব্রিজটি আন্দাজিল ব্রিজ নামে পরিচিত। প্রায় অর্ধ-শত বছর পূর্বে এই আন্দাজিল ব্রিজটি প্রথম নির্মাণের পর অবশিষ্ট কিছু ইট, কংক্রিট ও বালু সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ম্যানেজ করে পশ্চিমপাড়া এলাকার গণা মীর নামে এক ব্যক্তি পশ্চিমপাড়া সাভা নামে পরিচিত সেই উচুঁ জায়গায় সর্বপ্রথম একটি মাজার এর আকৃতি নির্মাণ করে সেখানে রাতে জিকির করতেন। কিছু দিন পর শারিরীকভাবে তিনি অসুস্থ হওয়ার পর বন্ধ হয়ে যায় সেই কার্যক্রম। বেশ কয়েকবছর পর্যন্ত এ অবস্থা চলার পর এলাকার জনৈক বয়ো:বৃদ্ধ মহিলা ফের সেখানে প্রত্যহ সন্ধায় মোমবাতি জ্বালাতে থাকেন। এতে এলাকার লোকজন বাধাঁ দেওয়ার চেষ্টা করলেও দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকে। শবেবরাতসহ বিভিন্ন উপলক্ষে এলাকার ছোট শিশুরা মোমবাতি জ্বালিয়ে সেখানে বিভিন্ন সময়ে জিকির করে। গত ৫/৭বছর পূর্বে এই কথিত মাজারের দিকে নজর পড়ে একই এলাকার যুবক সারোয়ার হোসেনের। মাজারপূজারী কিছু বয়ো:বৃদ্ধ মহিলার সরল বিশ্বাসকে পূজিঁ করে সেখানে আস্তানা গড়ার পায়তাঁরা করেন তিনি। সেই থেকে কথিত সেই মাজারটিকে তিনি ও তারঁ কিছু অনুসারী ওলির মাজার বলে এলাকায় প্রচার করতে থাকেন। সহজ সরল মাজারভক্ত কিছু নারী-পুরুষকে বুঝিয়ে কথিত সেই মাজারে যেন ছাগল-ভেড়া না উঠতে পারে মাজারের চতুর্দিকে ইট দিয়ে বাউন্ডারী দিয়ে আস্তানা গড়ে তুলেন তিনি। প্রতি বৃহস্পতিবার রাতে আয়োজন করেন বিশেষ আসর। সেখানে থাকেন নারী-পুরুষসহ বিভিন্ন বয়সের মাজারপূজারী লোকজন। অভিযোগ রয়েছে, নেশা-খোরদের নিরাপদ আস্তানা হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে এখানে মাজার পূজার নামে চলছে বিভিন্ন নেশা জাতীয় দ্রব্য সেবন। এ নিয়ে এলাকাবাসীর মনে দীর্ঘদিন ধরে চাপা ক্ষোভ বিরাজ করলেও প্রকাশ্যে মুখ খুলছেন না কেউ। সম্প্রতি এলাকার কিছু সংখ্যক লোকজনের গোপন আতাঁতে ও আর্থিক সহযোগিতায় সেই ইটের কথিত মাজারটিকে ভেঙ্গে নতুন করে সংস্কার করেন সারোয়ার হোসেন ও তার সহযোগীরা। রঙ্গিন টাইলসে সুসজ্জিত করে আধুনিক মাজার নির্মাণ করে মাজারটি হযরত সাহাব্বাল(র:) পরর্তীতে মহিব্বুল্লা(র:)সহ বিভিন্ন কথিত ওলীর মাজার বলে প্রচার করতে থাকেন। বিভিন্ন মাজার পূজারী লোকদের নিকট থেকে ছাগল, চাল, ডালসহ আর্থিক সাহায্য এনে প্রতি বৃহস্পতিবার রাতে আসর বসিয়ে সাধারণ মানুষের মগজ ধুলায় করে এবং খিচুঁরীসহ নানা মুখরোচক খাবার পরিবেশন করে সাধারণ মানুষকে মাজারমুখী করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এ অবস্থায় তিনি মাজারের চতুর্দিকে অত্যধিক জায়গা নিয়ে ফের নতুন করে বাউন্ডারী দিয়ে কথিত সেউ মাজারের উপর ছাদ দিয়ে স্থায়ী আস্তানা নির্নাণ করে ব্যবসায়ীক ফায়দা লুটার অপচেষ্টা করছেন বলে স্থানীয় লোকজনের অভিযোগ। স্থানীয় জায়গার মালিকগণ বলেন, আমাদের পূর্ব পুরুষদের রেখে যাওয়া জায়গায় আমাদের বংশধরগণের আত্বার মাগফেরাতের জন্য স্থানীয় মসজিদে আমরা ওয়াকপফ করে জায়গা দিয়েছি। এখানে একটি হাফিজিয়া মাদ্রাসা গড়ে উঠেছে। ভবিষ্যতে মাদ্রাসায়ও আমরা জায়গা ওয়াকফ করে দিব। মসজিদ ও মাদ্রাসার পাশে আমাদের বংশধরদের জায়গায় সারোয়ার হোসেন এর এক আঙ্গুল জায়গা না থাকা সত্ত্বেও সম্পূর্ণ অনৈতিকভাবে শুধুমাত্র বানিজ্যিক উদ্দেশ্যে এখানে কথিত মাজারকে রঙ্গীন সাজে সজ্জিত করে নতুন করে বাউন্ডারী ও ছাদ দেওয়ার সে যে অপচেষ্টা করছে তা আর হতে দেওয়া হবে না। শিরিক বেদাতের আস্তানার বিরোদ্ধে এখন ফুঁসে উঠছেন এলাকাবাসী। এ ব্যপারে এলাকায় শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান নিশ্চিত করতে কথিত সেই মাজারকে ঘিরে গর্হিত সকল কর্মকান্ড থেকে ফিরে আসতে সারোয়ার হোসেনকে জায়গার মালিকদের পক্ষ থেকে নিষেধ করা হয়েছে। এ ব্যপারে প্রশাসন ও এলাকার আলেম-ওলামা, ধর্মপ্রাণ তৌহিদী জনতাসহ সকলের সার্বিক সহযোগিতা কামনা করেছেন এলাকাবাসী।

আপনার মন্তব্য লিখুন

আর্কাইভ

July 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031  
আরও পড়ুন