সরাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চলছে চিকিৎসার নামে প্রতারণা, ব্রাদারদের দখলে ডাক্তারদের আসন, দেখার কেউ নেই
বার্তা সম্পাদক প্রকাশিত: ১১:০৫ পূর্বাহ্ণ , ১৭ আগস্ট ২০১৮, শুক্রবার , পোষ্ট করা হয়েছে 5 years আগেএম এ করিম সরাইল নিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম ডেস্ক:
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসার নামে চলছে প্রতারণা। উপজেলার একমাত্র ৫০শয্যাবিশিষ্ট এই হাসপাতালে দূর-দূরান্ত থেকে রোগীরা আসেন এমবিবিএস পাশ সরকারী ডাক্তারদের সেবা নিতে। কিন্তু হাসপাতালের জরুরী বিভাগসহ বিভিন্ন কক্ষে ডাক্তারদের আসনে বসা ব্রাদারদের(সিনিয়র স্টাফ নার্স) চিকিৎসা নিয়ে প্রতারিত হচ্ছেন এলাকার সাধারণ রোগীরা। হাসপাতালটিতে দীর্ঘ দিন ধরে ডাক্তার সংকটের দোহায় দিয়ে দিব্যি ডাক্তারদের আসনে বসে রোগীদের চিকিসা দিচ্ছেন একাধিক ব্রাদার। এতে করে প্রতিনিয়ত সরাইলে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে দরিদ্র জনগোষ্ঠী প্রতারিত হলেও বিষয়টি দেখার যেন কেউ নেই। জানা যায়, সরাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৩০ শয্যা থেকে ৫০শয্যায় উন্নীত হয়েছে অনেক বছর আগে কিন্তু ডাক্তারদের ডেপুটেশন নামক ব্যধি হাসপাতালের স্বাভাবিক চিকিৎসা কার্যক্রমকে প্রতিনিয়ত ব্যহত হচ্ছে। ২১ জন চিকিৎসকের স্থলে ৫ জন চিকিৎসক চিকিৎসাকার্যক্রমে থাকলেও বাকিদের কেউ ডেপুটেশন, কেউ অন্যত্র বদলি নিয়ে রয়েছেন যার যার সুবিধা মতো। এতে করে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন সরাইল উপজেলাবাসী। সম্প্রতি ডেপুটেশন নিয়ে অন্যত্র থাকা এখানকার পাঁচজন ডাক্তারকে রংপুর বিভাগে বদলি করা হলেও সরাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এর চিকিৎসা সেবায় অব্যবস্থাপণা যেন পিছু লেগেই আছে। বর্তমানে যে ক’জন ডাক্তার আছেন তারাও তাদের ইচ্ছেমতো চালিয়ে যাচ্ছেন চিকিৎসাকার্যক্রম। জরুরী বিভাগে দায়িত্বপ্রাপ্ত ডাক্তারগণ ব্রাদারদের দায়িত্ব দিয়ে নিজেরা অন্যান্য সুবিধা গ্রহণ করছেন। ডাক্তার মনে করে ব্রাদারদের চিকিৎসা নিয়েই বাড়ি ফিরছেন এলাকার সাধারণ রোগীরা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হাসপাতালটিতে রাজু, ইলমান, আমিরুল ও মাসুমসহ ৪জন ব্রাদার(সিনিয়র স্টাফ নার্স) রয়েছে। বিধিমোতাবেক রোগীদের প্রেসক্রাইব করার অধিকার না থাকা সত্ত্বেও হাসপাতালের জরুরী বিভাগসহ অন্যান্য কক্ষে ডাক্তারদের আসনে বসে তাঁরা দিব্যি রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছেন। সম্প্রতি উপজেলার সৈয়দটুলা গ্রামের নাসরিন নামের এক মহিলা তার শিশু পুত্রকে নিয়ে হাসপাতালের জরুরী বিভাগে গেলে চিকিৎসকের আসনে রাজু নামে একজন ব্রাদারককে দেখতে পান। এ সময় কর্তব্যরত ডাক্তার কোথায় জানতে চাইলে বাসায় রেস্ট নিচ্ছেন বলে ব্রাদার রাজু জানানা। এ সময় চিকিৎসকের আসনে থাকা ব্রাদার রাজু গল্প-গুজবে ব্যস্ত থেকে চিকিৎসার নামে কালক্ষেপণ করতে থাকেন। এ সময় দুধ মিয়া নামে একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা চিকা কামড়ের যন্ত্রনা নিয়ে জরুরী বিভাগে আসলে ব্রাদার রাজু মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় পেয়েও চিকিৎসার নামে তাঁর সাথেও প্রহসন করে কালক্ষেপণ করে চিকিৎসা দেন। এ সময় রোগীদের সাথে ব্রাদার রাজু বাক-বিতন্ডায় লিপ্ত হওয়ার একপর্যায়ে দুর্ব্যবহার করেন। খবর পেয়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত ডাক্তার বাসা থেকে জরুরী বিভাগে এসে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন। অভিযোগ রয়েছে রাজুসহ অন্যান্য ব্রাদারদের হাতে প্রতিনিয়ত এলাকার সাধারণ রোগীরা চিকিৎসার নামে প্রতারিত হচ্ছেন। এছাড়া রোগীদের সাথে যেন-তেনভাবে দুর্ব্যবহার করছেন। দীর্ঘদিন ধরে এ অবস্থা চলতে থাকলেও এ ব্যপারে দেখার যেন কেউ নেই। এছাড়া দীর্ঘদিন ধরে হাসপাতালে ডাক্তার সংকটের পাশাপাশি নানা সমস্যার অভিযোগ থাকলেও উপজেলার একমাত্র ৫০শয্যার এই হাসপাতালটির চিকিৎসা সেবার মান উন্নতি হচ্ছে না। নানা অজুহাতে রোগীদের হয়রানীসহ প্রাথমিক চিকিৎসা না দিয়েই জেলা সদর হাসপাতালে রোগীদের রেফার্ড করার অভিযোগও দীর্ঘদিনের। সরাইল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) ডাঃ আনাস ইবনে মালেক বলেন, আমাদের ডাক্তার সংকট, এখানে আমরা ৫জন চিকিৎসক আছি বর্তমানে। আমাদেরকে ডাক্তারের ব্যবস্থা করে দিন আমি কথা দিচ্ছি একজন ব্রাদারও জরুরী বিভাগে থাকবেনা। এ ব্যপারে উপজেলা সাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ডাঃ কাজী মোঃ আইনুল ইসলাম বলেন, চিকিৎসক সংকটের কারনে এই সমস্যা হচ্ছে। জরুরী বিভাগে ব্রাদার(সেবক) চিকিৎসা দিতে পারে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, তাদেরকে এমন বলা আছে প্রাথমিক চিকিৎসা যেন তারা দেন এর বাইরে নয়। আর তারা দেখতে দেখতে সব শিখে গেছে। তবে তিনি স্বীকার করেন ব্রাদাররা চিকিৎসা দিতে পারেনা।
হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা ব্রাদারদের হাতে প্রতারণার শিকার ভুক্তভোগী রোগীদেরকে এ অবস্থা থেকে মুক্ত করে হাসপাতালে স্বাভাবিক চিকিৎসা কার্যক্রম ফিরিয়ে আনতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের প্রতি দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
আপনার মন্তব্য লিখুন