২৫শে মার্চ, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ১১ই চৈত্র, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ

EN

সরাইলে শহীদ বুদ্ধিজীবি এডভোকেট সৈয়দ আকবর হোসেন বকুল মিয়ার ৪৬তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত

বার্তা সম্পাদক

প্রকাশিত: ১২:৪৫ পূর্বাহ্ণ , ৭ ডিসেম্বর ২০১৭, বৃহস্পতিবার , পোষ্ট করা হয়েছে 5 years আগে

FB_IMG_1512582633466

এম এ করিম সরাইল নিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম ডেস্ক:

ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২(সরাইল-আশুগঞ্জ) আসনে এমপি পদে আওয়ামীলীগ দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশী আওয়ামীলীগ নেতা বিশিষ্ট আইনজীবি এডভোকেট সৈয়দ তানবির হোসেন কাউছার এর পিতা শহীদ বুদ্ধিজীবি  সৈয়দ আকবর হোসেন বকুল মিয়ার ৪৬তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে উপজেলার ইসলামাবাদ মাদরাসায় আজ বুধবার(৬ডিসেম্বর) বাদ যোহর মিলাদ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়েছে। মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা এহছান উল্লাহর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উক্ত অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন আওয়ামীলীগ নেতা সাবেক অতিরিক্ত সচিব ফরহাদ রহমান মাক্কি, সিরাজুল ইসলাম মাস্টার, সৈয়দ আলী আবদাল, এডভোকেট সৈয়দ তানবির হোসেন কাউছার প্রমুখ।  এডভোকেট সৈয়দ তানবির হোসেন কাউছার বলেন,

আজ ৬ই ডিসেম্বর আমার পিতা শহীদ বুদ্ধিজীবি এডভোকেট সৈয়দ আকবর হোসেন বকুল মিয়ার ৪৬তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ । ১৯৭১ সালের এই দিনে তৎকালীন এন্ডারসন খালের (বর্তমান কুরুলিয়া খাল) পাশে পাকিস্থানী হানাদার বাহিনী আমার পিতাসহ ৩৯ জনকে হত্যা করেছিল। তিনি পেশায় আইনজীবী ও সক্রিয়ভাবে রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতি করতেন। সৎ, সাহসী ও স্বাধীনচেতা ছিলেন। ১৯৫৫ সালে তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজ ছাত্রসংসদ নির্বাচনে সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচনে অংশ নিয়ে জয়ী হন। পরে বৃহত্তর কুমিল্লা জেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য ছিলেন। আইনজীবী হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেন ঢাকায়। ঢাকা আইনজীবী সমিতির সদস্য ছিলেন। ঢাকার বড় মগবাজারে নয়াটোলায় ছিল আমাদের বাসা। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে বাবা আমাদের নিয়ে গ্রামের বাড়ি চলে আসেন। বাবা যেহেতু রাজনীতি করতেন, তাই তাঁর কাছে প্রতিদিনই লোকজন আসতেন যুদ্ধের সর্বশেষ খবর জানার জন্য। কিছুদিন পর থেকে সরাইল এলাকায় পাকিস্তান সেনাবাহিনীর আনাগোনা শুরু হয়। তখনো বাবার কাছে লোকজন আসতে থাকে। কিছুদিন পর আমার চাচা সৈয়দ আফজল হোসেন মুক্তিবাহিনীতে যোগ দিতে ভারতে যান। ‘দেশের অন্যান্য এলাকার মতো সরাইলেও ছিল পাকিস্তানের সমর্থক ও সেনাবাহিনীর অনুচর। তারা বাবার কাছে লোকজন আসাকে সহজভাবে নেয়নি। তারা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কাছে বাবার নামে নালিশ করে এবং জানায় আমাদের বাড়িতে জয় বাংলার মিটিং হয়। এ সমস্ত সংবাদের ভিত্তিতে পাকিস্তান সেনাবাহিনী ক্ষিপ্ত হয়ে বাবার খোঁজে একদিন গ্রামে আসে। তখন বাবা পালিয়ে আগরতলা চলে যান। সেখানে তিনি মুক্তিযুদ্ধের কাজে জড়িয়ে পড়েন। মাঝে মাঝে আমাদের দেখার জন্য গোপনে বাড়িতে আসতেন। তাঁর বাড়িতে আসার এবং মুক্তিযুদ্ধের কাজে জড়িয়ে পড়ার খবর গোপন থাকেনি। স্বাধীনতাবিরোধীরা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কাছে বাবার খবর নিয়মিত পৌঁছাতে থাকে। সেনাবাহিনীও তাঁকে ধরার জন্য হন্যে হয়ে খুঁজছিল। ‘৩ ডিসেম্বর পাকিস্তান সেনাবাহিনী স্বাধীনতা বিরোধীদের সহায়তায় বাবাকে আটক করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় নিয়ে যায়। আমার দাদা খবর পেয়ে চেষ্টা করেন বাবাকে ছাড়িয়ে নেওয়ার। কিন্তু তাঁর চেষ্টায় কোনো কাজ হয়নি। এদিকে বাবা আটক হয়েছেন খবর পেয়ে আমার মুক্তিযোদ্ধা চাচা বাড়িতে এসেছিলেন। স্বাধীনতা বিরোধীরা কীভাবে যেন তাঁর আসার খবরও পেয়ে যায়। ৫ ডিসেম্বর পাকিস্তানি সেনারা আমাদের বাড়িতে অতর্কিতে আক্রমণ করে চাচাকেও ধরে নিয়ে যায়। ‘৭ ডিসেম্বর বাড়িতে খবর আসে, ৬ ডিসেম্বর রাতে পাকিস্তানি সেনারা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কুরুলিয়া খালের পাড়ে বাবা-চাচাসহ মোট ৪০ জনকে গুলি করে হত্যা করেছে। এই খবর পেয়ে কেউ সেখানে যেতে সাহস পাচ্ছিলেন না। ৮ ডিসেম্বর কুট্টাপাড়ার মালেক ড্রাইভার আমাদের বাড়ির ও গ্রামের কয়েকজনকে সঙ্গে নিয়ে ৪০টি লাশের মধ্যে থেকে আমার বাবা সৈয়দ আকবর হোসেন (বকুল মিয়া) ও চাচা সৈয়দ আফজল হোসেন এর লাশ বের করে আনেন। উল্লেখ্য ‘সৈয়দ আকবর হোসেন(বকুল মিয়ার) জন্ম ১৯৩৫ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল থানার আলীনগর গ্রামে। তিনি বকুল মিয়া নামে পরিচিত ছিলেন। বাবা সৈয়দ সুয়েব আলী (বাচ্চু মিয়া), মা আবেদা খাতুন। বাবা-মায়ের প্রথম সন্তান তিনি। তাঁর লেখাপড়ার হাতেখড়ি স্থানীয় স্কুলে। সরাইল  অন্নদা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ম্যাট্রিক পাস করে ভর্তি হন ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজে। এখান থেকে আই এ পাস করে ঢাকার জগন্নাথ কলেজ থেকে বি এ পাস করেন। এরপর কিছুদিন সরকারি চাকরি করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন পাস করে আইন পেশায় যোগ দেন। সৈয়দ আকবর হোসেন (বকুল মিয়া) এক ছেলে ও তিন মেয়ের জনক। মেয়ে সৈয়দা সুরাইয়া আকতার ও সৈয়দা সুলতানা আক্তার গৃহিনী এবং ছোট মেয়ে  সৈয়দা ফারজানা খানম স্কুল শিক্ষিকা।

 

 

আপনার মন্তব্য লিখুন

আর্কাইভ

March 2023
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031  
আরও পড়ুন