সরাইলে ভুল চিকিৎসায় প্রসূতি মা ও নবজাতকের মৃত্যূর অভিযোগ
বার্তা সম্পাদক প্রকাশিত: ৫:০৬ অপরাহ্ণ , ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯, শুক্রবার , পোষ্ট করা হয়েছে 4 years আগে
সরাইল নিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম ডেস্কঃ
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে ভূয়া ও হাতুড়ে এক গাইনি চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসায় প্রসূতি মা ও নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ পাওয়া গেছে। বৃহস্পতিবার (০৫সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় সরাইল উপজেলা ৫০ শয্যা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সংলগ্ন উচালিয়াপাড়া এলাকায় ভূয়া কথিত গাইনি চিকিৎসক মোছা. সালেহা বেগমের ভাড়া বাসায় ভুল চিকিৎসাধীন অবস্থায় মোছা. স্বপ্না আক্তার (২০) নামে ওই প্রসূতি মা ও তার সন্তানের মৃত্যু হয়েছে বলে নিহতের স্বজনরা নিশ্চিত করেছন। নিহত স্বপ্না আক্তার উপজেলার কালীকচ্ছ ইউনিয়নের নন্দীপাড়া গ্রামের কুতুব আলীর মেয়ে। তিনি সরাইল সরকারি কলেজের ছাত্রী ছিলেন। এক বছর আগে স্বপ্নার বিয়ে হয় একই ইউনিয়নের ধর্মতীর্থ গ্রামের মো. নান্নু মিয়ার প্রবাসী ছেলে সফিকুল ইসলামের সাথে। এদিকে হাতুড়ে এ চিকিৎসকের ভুল চিকিৎসায় মা ও সন্তানের মৃত্যুর ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে একটি প্রভাবশালী মহল সক্রিয় হয়ে উঠেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
খবর পেয়ে স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিক বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৯টায় নিহত স্বপ্নার পিতার বাড়িতে গেলে স্বজনরা জানান, মা ও নবজাতক সন্তানের লাশ নিয়ে লোকজন ইউনিয়নের চাঁনপুর গ্রামের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়েছেন কিছুক্ষণ আগে। সেই গ্রামেই কবরস্থানে মা ও নবজাতকের লাশ দাফন করা হবে। এদিকে নিহতের বাড়ি থেকে সাংবাদিকরা রাত পৌনে ১০টার দিকে মুঠোফোনে প্রসূতি মা ও তার সন্তানের ভুল চিকিৎসায় করুন মৃত্যুর ঘটনাটি সরাইল থানার ওসি সাহাদাত হোসেন টিটোকে জানানো হয়। তিনি নিহতের বাড়িতে পুলিশ পাঠাবেন বলে জানান। পরে বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসার এ এস এম মোসাকে জানানো হলে তিনি বলেন, এই অন্যায় মেনে নেওয়া যায়না। বিষয়টি আমি দেখতেছি। নিহত স্বপ্নার ফুফু মোছা. সুজেরা বেগম সাংবাদিকদের জানান, সকালে প্রসব বেদনা উঠলে সিজার করতে স্বপ্নাকে আমরা প্রাইভেট হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। স্বপ্নার শ্বাশুড়ির পীড়াপীড়িতে স্বপ্নাকে গাইনি চিকিৎসক সালেহা বেগমের বাসায় নেওয়া হয়। সেখানে প্রথমে শরীরে স্যালাইন পুশ করে স্বপ্নাকে ফেলে রাখা হয়। দুপুরের দিকে বাচ্চার মাথা খানিকটা দেখা দিলে স্বপ্নার চিৎকারে ঘরের দেওয়াল ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়। আমরা ওইসময়ে স্বপ্নাকে সেই অবস্থায় প্রাইভেট হাসপাতালে এনে সিজার করতে অনেক অনুরোধ জানাই। তখন গাইনি চিকিৎসক সালেহা বেগম ও তার এক সহকারী আমাদের ওপর চড়াও হন।
বিকেলে স্বপ্নার মৃত বাচ্চা প্রসব হয়। তখন চিকিৎসক সালেহা বেগম সেই স্থানে হাত ঢুকিয়ে কি যেন কাটতেই স্বপ্নার অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ শুরু হয়। তখন স্বপ্না উচ্চ স্বরে কাঁদতে কাঁদতে আমাকে বলে, ফুফু আমার বাবাকে দেখাও আমার ছোট ভাই-বোনকে দেখাও আমি আর বাঁচবনা। এই কথাগুলো বলতে বলতে জিহ্বা বের করে দাঁত দিয়ে কামড়ে ধরে স্বপ্না অজ্ঞান হয়ে পড়ে। এই অবস্থায় হাসপাতালে নেওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক স্বপ্না ও তার নবজাতক সন্তানকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিহত স্বপ্নার নিকটাত্মীয় শারীরিক প্রতিবন্ধী মো. কাশেম মিয়া সাংবাদিকদের জানান, ভূয়া গাইনি চিকিৎসক সালেহা বেগম ছয়বছর আগে আমার স্ত্রী মুন্নি বেগম (২৪) কে স্বপ্নার মতো একই কায়দায় হত্যা করেছিলেন তিনি। তখন আমার স্ত্রীর দ্বিতীয় সন্তান হওয়ার কথা ছিল। সেই সময়ে সালেহা বেগম অর্থের জোরে রাজনৈতিক নেতাদের প্রভাব খাটিয়ে রক্ষা পান। এদিকে রাতেই উচালিয়াপাড়া গ্রাম এলাকায় সালেহা বেগমের ভাড়া বাসায় এসে কাউকে পাওয়া যায়নি। প্রতিবেশী লোকজন জানান, সন্ধ্যায় এই বাসায় এক প্রসূতি মা ও নবজাতক শিশু মারা যাবার পর সালেহা বেগমসহ অন্যরা এ বাড়ি ছেড়ে পালিয়েছে। সালেহা বেগমের স্বামী আবদুল কাইয়ূম সরাইল সরকারি হাসপাতালে প্যাথলজিক্যাল বিভাগে চাকরি করতেন।
সেই সুবাদে সালেহা বেগম এ সরকারি হাসপাতালে গাইনি ওয়ার্ডে চুক্তিভিত্তিক ‘আয়া’ হিসেবে কাজ করতো। একসময় তিনি নিজেকে পরিপক্ব গাইনি বিষয়ক ও পরে উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের গ্রামের সহজ-সরল মানুষদের কাছে নিজেকে গাইনি চিকিৎসক পরিচয় দিয়ে ভাড়া বাসায় প্রসূতি মায়েদের নানা চিকিৎসা শুরু করেন সালেহা বেগম। তিনি দীর্ঘ বছর যাবত এই অনৈতিক কাজ চালিয়ে আসছেন বলে জানা গেছে।
আপনার মন্তব্য লিখুন