সরাইলে দাদন ব্যবসায়ীর জালে বন্দি এক শিক্ষকের আকুতি ‘আমি চাকুরি ফেরত চাই, পরিবার নিয়ে বাঁচতে চাই’, ৫০ হাজার টাকার পরিবর্তে ৫ লাখ টাকা দাবি
বার্তা সম্পাদক প্রকাশিত: ৬:৫৬ অপরাহ্ণ , ১ মার্চ ২০১৯, শুক্রবার , পোষ্ট করা হয়েছে 4 years আগে
সরাইল নিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম ডেস্ক:
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলা সদরের হালুয়াপাড়া গ্রামের বাসিন্দা প্রভাবশালী দাদন ব্যবসায়ী ও সাবেক ইউপি সদস্য হুমায়ূন মিয়ার জালে বন্দি অসহায় এক শিক্ষকের আকুতি, ‘আমি চাকুরি ফেরত চাই, অসুস্থ বাবা ও তিন কন্যাসহ পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বাঁচতে চাই।’ গত বৃহস্পতিবার বিকেলে সরাইল প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে কান্নাজড়িত কণ্ঠে কথাগুলো বলেন সরাইল উপজেলার শাহবাজপুর পূর্ব সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাময়িকভাবে বরখাস্থ সহকারী শিক্ষক আরিফুল ইসলাম (৪৬)। তিনি শাহবাজপুর ইউনিয়নের শাহবাজপুর গ্রামের কাউছার মতিনের ছেলে। আরিফুল ইসলাম সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলেন, অসুস্থ মেয়ের (ভবনের ছাদ থেকে পড়ে গুরুতর আহত) চিকিৎসার জন্য হুমায়ুন মিয়ার নিকট থেকে ২০১০ সালের ১৩ জানুয়ারি সুদে ৫০ হাজার টাকা ঋণ গ্রহণ করেন। শর্ত ছিল হুমায়ুন মিয়াকে প্রতি মাসে তাঁর বেতনের চেক বহির মাধ্যমে দুই হাজার টাকা সুদ প্রদান করবেন। তিনি ২০১৪ সালের মার্চ পর্যন্ত ৭৬ হাজার টাকা সুদ প্রদান করেন। এর পর ৫০ হাজার টাকা ফেরত দিয়ে স্বাক্ষরযুক্ত খালি চেক বহি ফেরতের প্রস্তাব করেন ওই শিক্ষক। এতে বেঁকে বসেন হুমায়ুন মিয়া। তখন হুমায়ুন মিয়া এক লাখ টাকা দাবি করেন। এর পর থেকে আরিফুল ইসলাম সুদ দেওয়া বন্ধ করে দেন। এতে হুমায়ুন মিয়া ক্ষিপ্ত হয়ে ওই শিক্ষককে প্রথমে মামলা দিয়ে হয়রানি করার ও পরে প্রাণ নাশের হুমকি প্রদান করেন। সামাজিকভাবে সালিস বৈঠকের মাধ্যমে বিষয়টি নিস্পত্তির চেষ্টা চালান আরিফুল ইসলাম। এতে আরও ক্ষিপ্ত হন হুমায়ুন মিয়া। তিনি ২০১৪ সালের ১০ মার্চ আদালতে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে চেক জালিয়াতির মামলা দায়ের করেন। মামলার আর্জিতে উল্লেখ করা হয় ২০১৩ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ওই শিক্ষক হুমায়ুনের নিকট থেকে এক লাখ ৫০ হাজার টাকা কর্জ (সুদবিহীন ঋণ) গ্রহণ করেন। তখন বিশ^াসস্বরুপ জামানত হিসেবে বেতনের খালি চেক জমা রাখেন। ওই বছরের দুই জুন মামলাটি দুদকে চলে যায়। মামলা দুদকে চলে যাওয়ার পর ওই শিক্ষককে প্রাণ নাশের হুমকি ও কন্যাদের অপহরণের ক্রমাগত হুমকি দিতে থাকেন হুমায়ুন। বাধ্য হয়ে আরিফুল ইসলাম ২০১৪ সালের ৬ জুলাই সরাইল থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। গত বছরের মে মাসে মামলাটি দুদক থেকে নি¤œ আদালতে ফেরত যায়। এর পর গত বছরের আট আগস্ট আদালত ওই শিক্ষককে প্রতারণার দায়ে এক বছরের সশ্রম কারাদ- ও তিন হাজার টাকা জরিমানার রায় প্রদান করেন। ওই দিনই তিনি আপিল করে জামিনে মুক্তি পান। রায় ঘোষণার পর গত বছরের নভেম্বর মাসে ওই শিক্ষককে সাময়িক বরখাস্থ করেন কর্তৃপক্ষ। এর পর গত ২০ জানুয়ারি আদালতের মাধ্যমে তিনি এক লাখ ৫০ হাজার টাকা দিয়ে আপিল মঞ্জুরের আবেদন করেন। এতেও হুমায়ুন মিয়া বেঁকে বসেন। ওই দিন তিনি পাঁচ লাখ টাকা দাবি করেন। আরিফুল ইসলাম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘৫০ হাজার টাকার জন্য চাকুরি থেকে বরখাস্থ হলাম। সামাজিকভাবে হেয় হলাম, আদালত চত্বর আর সমাজপতিদের কাছে ঘুর ঘুর করতে করতে প্রায় তিন লাখ টাকা শেষ করলাম। এখন আমি ভবঘুরে হলাম। আমি রাত দিন ঘুরঘুর করছি। আমি আর পারছি না। আমি চাকুরি ফেরত চাই। পরিবারের সবাইকে নিয়ে বাঁচতে চাই।’ এ ব্যাপারে মুঠোফোনে হুমায়ুন মিয়া বলেন, আরিফুল ইসলাম ছয় বছর আগে মায়ের চিকিৎসার জন্য কয়েকটি খালি চেক রেখে দেড় লাখ টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। এ টাকা উদ্ধারের জন্য বার বার আদালতে যেতে হয়েছে। আমার সুনাম ক্ষুন্ন করেছে। এ জন্য সব মিলিয়ে এখন আমাকে পাঁচ লাখ টাকা দিলে আমি মামলা তুলে নেব।’
আপনার মন্তব্য লিখুন