সরাইলে এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রে পরীক্ষার্থীদের এডিসি কর্তৃক হয়রানির অভিযোগ, ইংরেজি প্রথম পত্র পরীক্ষা পুনঃ গ্রহনের দাবি
বার্তা সম্পাদক প্রকাশিত: ৫:১৩ অপরাহ্ণ , ৫ মে ২০২৩, শুক্রবার , পোষ্ট করা হয়েছে 2 years আগেসরাইলে এসএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রে পরীক্ষার্থীদের এডিসি কর্তৃক হয়রানির অভিযোগ, ইংরেজি প্রথম পত্র পরীক্ষা পুনঃ গ্রহনের দাবি
এম এ করিম সরাইল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) সংবাদদাতাঃ
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে চলমান এসএসসি পরীক্ষার ইংরেজি প্রথম পত্র পরীক্ষার দিনে এডিসি কর্তৃক এক কেন্দ্রে পরীক্ষার্থীদের নানাভাবে হয়রানির অভিযোগ ওঠেছে। পরীক্ষা কেন্দ্রে দেড় থেকে দুই ঘন্টা অবস্থান করে তদন্তের নামে পরীক্ষার্থীদের ভয়ভীতি, হুমকি-ধামকি দিয়ে মানসিক নির্যাতন করার অভিযোগে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন অর্ধশত পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবক। সরাইল-৪ কেন্দ্রের (কেন্দ্র কোড ৪৩৮) সরাইল সদর উচ্চ বিদ্যালয় ভেন্যুতে গত ৩মে বুধবার ইংরেজি প্রথম পত্র বিষয়ের পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে এ ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে উক্ত কেন্দ্রের কেন্দ্র সচিব মোঃ আনোয়ার হোসেন এর সাথে এডিসি’র (শিক্ষা) বাকবিতন্ডা হয়েছে।
এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ৪ মে (বৃহস্পতিবার) সকাল ১০ টায় বিক্ষুদ্ধ এসএসসি পরীক্ষার্থী ও অভিভাবকগণ এডিসি’র বিরুদ্ধে মানববন্ধন করতে সরাইল পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে জড়ো হয়। এ সময় সরাইল উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও সরাইল পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা পরিষদের সভাপতি মোঃ রফিক উদ্দিন ঠাকুরের হস্তক্ষেপে মানববন্ধন প্রত্যাহার করা হয়।
ভুক্তভোগীরা জানায়, চলমান এসএসসি পরীক্ষার তৃতীয় দিন গত বুধবার ছিল ইংরেজি প্রথম পত্রের পরীক্ষা। পরীক্ষা শুরুর ১৫-২০ মিনিটের মধ্যেই সরাইল পাইলট বালিকা উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রের (সরাইল-০৪, কোড-৪৩৮) ভেন্যু সরাইল সদর উচ্চ বিদ্যালয় প্রবেশ করেন এডিসি (শিক্ষা) জিয়াউল হক মীর। সরাইল পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, নোয়াগাঁও উচ্চবিদ্যালয় ও বেড়তলা উচ্চবিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থীদের আসন পড়েছে সেখানে। এডিসি কক্ষে প্রবেশ করে পরীক্ষার্থীদের নাম ও প্রতিষ্ঠানের নাম জিজ্ঞেস করেন। সঙ্গে থাকা তাঁর একজন সহকর্মীও পরীক্ষার্থীদের সাথে কথা বলেন। দীর্ঘ সময় অবস্থান করে বিভিন্ন প্রশ্ন করতে থাকলে পরীক্ষার্থীরা আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে পড়ে। অনেকে অস্বস্থিবোধ করতে থাকে। বিষয়টি কেন্দ্রের বাহিরে ছড়িয়ে পড়লে অভিভাবকদের মধ্যে উদ্বেগ উৎকণ্ঠা বাড়তে থাকে। প্রশ্নবানে পরীক্ষার্থীদের বিব্রতকর পরিস্থিতিতে ফেলার অভিযোগ করার বিষয় নিয়ে কেন্দ্র সচিব মো. আনোয়ার হোসেনের সাথে এডিসি’র বাকবিতন্ডা হয়। এডিসি প্রায় দুই ঘন্টা ওই কেন্দ্রে অবস্থানের কথা জানিয়েছেন পরীক্ষার্থীরা। ওই কেন্দ্রের বিজ্ঞান বিভাগের পরীক্ষার্থী এনামুল হক সিয়াম, সুস্মিতা, জাকিয়া ইসলাম ইলমা, স্মৃতি ও ব্যবসা শিক্ষা শাখার আনাস বলেন, পরীক্ষার শুরুতেই এডিসি প্রবেশ করে প্রশ্নবানে আমাদেরকে কোণঠাসা করে ফেলেন। নাম কি? কোন স্কুলের শিক্ষার্থী? প্রবেশপত্র রেজিষ্ট্রেশন কার্ড দেখা। আবার উত্তর সঠিক হয়নি বলে ধমক। পরীক্ষা থেকে বরখাস্থ করে দেওয়ার হুমকি। অনেককে লাথি মেরে ফেলে দেয়ার কথাও বলেছেন। হতবিহবল হয়ে পড়েছে গোটা কেন্দ্রের পরীক্ষার্থীরা। সব মিলিয়ে তাঁর আচার আচরণে ও কথায় আমরা পরীক্ষা ভুলে গিয়েছি। জানা উত্তর ও লিখতে পারিনি। দেড়/দুই ঘন্টা কেন্দ্রে অবস্থান করেছেন। এরপর কেন্দ্রে এসেছেন আনোয়ার স্যার। প্রতিবাদ করায় আনোয়ার স্যারের সাথেও এডিসি’র বাক-বিতন্ডা হয়েছে। ইংরেজি প্রথম পত্র পরীক্ষা পুনঃ গ্রনের দাবি জানান বিক্ষুদ্ধ পরীক্ষার্থীরা।
অভিভাবক মো. হেলাল উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, একজন এডিসি পরীক্ষা কেন্দ্রে এতক্ষণ অবস্থান ও এমন তান্ডব চালাতে আগে কোন দিন দেখিনি। আমার মেয়ে গোল্ডেন এ প্লাস পাওয়ার কথা। তাঁর এহেন আলামতে জানা বিষয়ের উত্তরও লিখতে পারেনি। জীবনের এই ক্ষতির দায়ভার কে নিবে?
সরাইল উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও সরাইল পাইলট বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ব্যবস্থাপনা পরিষদের সভাপতি মোঃ রফিক উদ্দিন ঠাকুর বলেন, আমি ইউএনও সাহেবের সাথে এ ব্যপারে কথা বলেছি। এডিসি সাহেব ২ থেকে আড়াই মিনিট কেন্দ্রে ছিলেন বলে তিনি আমাকে সাদামাঠাভাবে বিষয়টি বুঝিয়েছেন। পরবর্তীতে ভুক্তভোগী পরীক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের মাধ্যমে বিষয়টি জেনে অবাক হয়েছি। এডিসি মহোদয় কেন্দ্রে ২ ঘন্টা অবস্থান করে পরীক্ষার্থীদের নানাভাবে হেনস্থা করেছেন বলে ভুক্তভোগীরা আমাকে বলেছেন। আমার এলাকার শিক্ষার্থীরা ক্ষতিগ্রস্থ হবে এটা কখনও কাম্য হতে পারে না। আমি এ ব্যপারে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের সাথে কথা বলব। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করছি।
সরাইল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ সরওয়ার উদ্দীন বলেন, এডিসি স্যার দেড় ঘন্টা অফিস কক্ষে বসা ছিলেন। শিক্ষক আনোয়ার হোসেনের আইডিয়াল রেসিডেন্সিয়াল স্কুলের পরীক্ষার্থীদের ও পাইলট বালিকা বিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থীদের আসন বিন্যাসে অনিয়মের একটি তদন্ত করতে এসেছিলেন। তদন্ত করেছেন। সিসি টিভিতে সব আছে। অযথা অভিযোগ করলে হবে না।
সহকারি জেলা প্রশাসক (শিক্ষা) জিয়াউল হক মীর সকল অভিযোগকে মিথ্যা, বানোয়াট ও সাজানো উল্লেখ করে বলেন, নকলমুক্ত সুষ্ঠু সুন্দর পরীক্ষা নিশ্চিত করাই আমাদের দায়িত্ব। ওই কেন্দ্রের একটি অনিয়মের বিষয়ে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের কাছে গোয়েন্দা তথ্য ছিল। ওঁর নির্দেশেই মূলত ওই বিষয়টির তদন্ত করতে এসেছিলাম। সেই তদন্তের বিষয় গুলো যাচাই-বাছাই করার যথোপযুক্ত স্থান ছিল ওই কেন্দ্র। সেখানে কাউকে হয়রানি বা কষ্ট দেয়া হয়নি। অভিযোগের সত্যতা পেয়েছি। বোর্ডকে সকল বিষয় অবহিত করেছি। কেউ যদি বিষয়টি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা করেন, করতে পারেন। তবে অনিয়ম ঢেকে রাখা যাবে না।
আপনার মন্তব্য লিখুন