২৩শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ৮ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

EN

সরাইলে আলু আর পাঙ্গাস খেতে ভিক্ষার থলি হাতে শিশু সুখী ডাক্তার হতে চাই!

বার্তা সম্পাদক

প্রকাশিত: ৯:২৯ পূর্বাহ্ণ , ২৩ জানুয়ারি ২০১৯, বুধবার , পোষ্ট করা হয়েছে 5 years আগে

 

এম এ করিম সরাইল নিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম ডেস্ক:

বই, খাতা ও কলম নয় একটি পুরাতন বাজারের ব্যাগ নিয়ে সকালে বাড়ি থেকে বের হয় শিশু সুখী(৭)। সাথে থাকে ছোট ভাই আমিন উল্লাহ(৫)। কনকনে শীতে ফূটফুটে চেহারায় মলিন জামায় আচ্ছাদিত শিশু সুখী তার ছোট ভাই আমান উল্লাকে নিয়ে মঙ্গলবার(২২জানুয়ারী) সন্ধায় উপজেলার নিজসরাইল সড়কের পাশে সরাইল নিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম কার্যালয়ের প্রবেশ পথে দাঁড়িয়ে কাপাঁ কাপাঁ কন্ঠে শিশু সুখী বলেন মামা কিছু সাহায্য দিবেন? বাজারের একটি পুরনো ব্যাগ হাতে মায়াবী চেহারার ও মলিন কাপড়ে ঢাকা অবুঝ দুই শিশুর সন্ধায় সাহায্য চাওয়ার ব্যপারটি হঠাৎ হৃদয়কে যেন নাড়িয়ে তুলেছে। কেমন যেন অন্তরে শিশু দুটির প্রতি একটু মায়ার সৃষ্টি হয়েছে। আহারে যেই সময়ে মায়ের আদর স্নেহ ও পরম মমতায় বই, খাতা ও কলম নিয়ে টেবিলে পড়তে বসার কথা সেই সময়ে ফেল ফেল করে থাকিয়ে পুরনো বাজারের ব্যাগ হাতে নিয়ে অন্ধকার রাত্রিতে সাহায্য চাই। এমনি অনেক ভাবনায় জানতে চাইলে কান্না ভরা কন্ঠে শিশু সুখী বলেন, উপজেলার কালিকচ্ছ ইউনিয়নের নন্দীপাড়ার বাবুল মন্দির এলাকায় তাদের বাড়ি। পিতার নাম জসিম মিয়া এবং মাতার নাম হোসেনা বেগম। অন্যত্র বিয়ে করে ভাই বোনসহ মায়ের কোনো খবর নেন না তাদের পিতা জসিম। অভাব অনটনের সংসারে সুখীসহ তাদের ভাই-বোনের ভরণ-পোষনের একমাত্র অবলম্বন তাদের মা ছাড়া আর কেউ নেই। নানা, নানী, মামা, খালা কেউ না থাকায় নানীর রেখে যাওয়া জায়গায় একটি টিন শেডের ঘরে তাদের বসবাস। সংসারের আর্থিক ব্যয়ভার বহনে মাঠি কেটে প্রতি দিন ২শত টাকা রোজগার করেন তাদের মা। তা দিয়ে ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের ভরণ-পোষন করাতে কষ্ট হয়। তাই মায়ের নির্দেশেই বাজারের ব্যাগ নিয়ে প্রতিদিন সাহায্যের জন্য তাদের বাড়ি থেকে বের হতে হয়। সারা দিন ঘুরে প্রায় ১০০টাকা সাহায্য পেয়ে মাকে নিয়ে দেয়। তা দিয়ে আলু আর পাঙ্গাস মাছ কিনে নিয়ে তাদের খাওয়ান মা। আর তা খেয়েই চলছে তাদের জীবন। চুমকী(৬), সুমাইয়া(৪) নামে দুই বোন ও আমিন উল্লাহ(৫) ও আব্দুল্লাহ(১) নামে দুই ভাই রয়েছে। এদের মধ্যে বোন সুমাইয়াকে নিয়ে কিছু দিন পূর্বে সুখী সাহায্য চাইতে গিয়ে বোন সুমাইয়া সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যায় বলে কান্নাজড়িত কন্ঠে জানান সুখী। তার পরেও অভাবের তাড়নায় ছোট ভাই আমিন উল্লাহকে নিয়ে আর্থিক সাহায্যের জন্য প্রতিদিন সকালে বাড়ি থেকে বের হয়ে সারাদিন সাহায্যের জন্য কালিকচ্ছ, সরাইলসহ অন্যান্য এলাকায় ঘুরে বেড়ায় সুখী। দুপুরে পুরি সিঙ্গারা খেয়েই দিন পার হয় তাদের। সারা দিনে ১০০টাকার মত সাহায্য পেয়ে এশার নামাযের আযানের পরে বাড়ি ফেরেন তারা। লেখা পড়া করতে ইচ্ছে হয় কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে ঢকঁরে কেদেঁ সুখী জানান লেখা পড়া করতে খুব ইচ্ছে হয়। লেখা-পড়া করে ডাক্তার হতে চাই। বেচেঁ থাকার লড়াইয়ে আলু আর পাঙ্গাস কিনতে পুরাতন বাজারের ব্যাগ হাতে নিয়ে সাহায্যের ঘূর্নিপাকে পরা অবুঝ শিশু সুখীর ডাক্তার হবার স্বপ্ন আদৌ পূরণ হবে কি? সমাজের বিত্তশালীরা এগিয়ে এলেই এই সুখীদের হাতে ভিক্ষার থলির পরিবর্তে উঠে আসতে পারে শিক্ষার বই। আর তাতেই ধীরে ধীরে পূরণ হতে পারে সুখীদের ডাক্তার হওয়ার সেই স্বপ্ন।

আপনার মন্তব্য লিখুন

আর্কাইভ

September 2023
M T W T F S S
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
252627282930  
আরও পড়ুন