২৫শে সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রিস্টাব্দ | ১০ই আশ্বিন, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

EN

সরাইলে অর্ধশতাধিক বছরের পুরনো শ্রম বিক্রির শ্রমিকের হাট

বার্তা সম্পাদক

প্রকাশিত: ৯:৫৯ অপরাহ্ণ , ১১ মে ২০২২, বুধবার , পোষ্ট করা হয়েছে 1 year আগে

সরাইলে অর্ধশতাধিক বছরের পুরনো শ্রম বিক্রির শ্রমিকের হাট

এম এ করিম সরাইল(ব্রাহ্মণবাড়িয়া)ঃ

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলের অরুয়াইল বাজারে গড়ে উঠেছে শ্রম বিক্রির বিশাল হাট। প্রায় অর্ধশতাধিক বছর ধরে চলে আসছে এই শ্রমের হাট। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে বৈশাখ মাসে বোরো ধান কাটা উপলক্ষে এই পুরনো শ্রম বাজারে আসেন শ্রমিকরা। প্রতিদিন শত শত দরিদ্র মানুষ এখানে আসে শ্রম বিক্রি করতে।

দিনের আলো ফোটার আগেই উপজেলার অরুয়াইল আবদুস সাত্তার ডিগ্রি কলেজ রোডে চোখে পড়ে মানুষের জটলা। ফজরের আজানের পর থেকেই মানুষগুলো জড়ো হতে শুরু করে। আরেক শ্রেণির মানুষ এখানে আসে শ্রম কিনতে। প্রায় ৫০ বছর ধরে অরুয়াইলে এই শ্রমিকের হাট গড়ে উঠেছে। এসব শ্রমিকরা ধান কাটা থেকে শুরু করে খেত-খামারের বিভিন্ন কাজ করে থাকেন।

প্রতিদিন উপজেলার পাকশিমুল, অরুয়াইল, চাতলপাড় ও চুন্টা ইউনিয়ন থেকে লোকজন শ্রম কিনতে আসেন এখানে। হাটে ওঠা পণ্যের মত এখানেও চলে দরদাম। এসব শ্রমিকের শ্রমের মূল্য প্রতিদিন ১হাজার থেকে ১হাজার ৩শ টাকা পর্যন্ত।

আজ বুধবার(১১ মে) ভোরে সরজমিনে দেখা গেছে, মূলত ময়মনসিংহ বিভাগের বিভিন্ন জেলাসহ স্থানীয় বিভিন্ন এলাকার লোকজন এখানে আসেন কাজের খোঁজে। এক বেলার জন্য বা কয়েকদিনের জন্য তারা বিক্রি হয় এই বাজারে। সারাদিন কাজ শেষে বিভিন্ন জেলার শ্রমিকরা স্থানীয় স্কুল -কলেজের বারান্দায় রাত্রি যাপন করেন।

শ্রমিকের এ হাটে কথা হয় নেত্রকোনা জেলার মোকতার আলীর (৫২) সাথে। তিনি জানান, তাদের নিজ জেলায় কাজ নেই। ছয় সদস্যের পরিবারে তিনিই একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। এ অঞ্চলে শ্রমের দাম বেশী, কাজও বেশী। তাছাড়া প্রতিদিন শ্রম বিক্রি করা যায়। তাই এখানে চলে আসি।

কিশোরগঞ্জের ফজর আলী (৪৬) জানান, মহাজনেরা আমাদেরকে মানুষ হিসেবেই গণ্য করে না। কাজে একটুও বিশ্রাম দিতে চায় না।

তবে শ্রমিকদের বিরুদ্ধে মালিকপক্ষের অভিযোগও কম নয়। সরাইল উপজেলার পাকশিমুল ইউনিয়নের জাহের আলী (৫০) বলেন, এখানকার শ্রমিকরা সাহেবদের মত। ঘড়ি ধরে কাজ করে। এদের বেশি কিছু বলা যায় না। কিছু বললেই কাজ ফেলে চলে যায়।

শ্রমিক নিতে আসা অরুয়াইল ইউনিয়নের শাহাজ উদ্দিন বলেন, ধান কাটার জন্য শ্রমিক নিতে আসছিলাম। আবহাওয়া খারাপ। ফোঁটা ফোঁটা বৃষ্টি পড়ছে। তাই বাড়ি চলে যাচ্ছি। বৃষ্টিতে তো শ্রমিকেরা ধান কাটতে পারবে না। তবে আজকে শ্রমিকের দাম কম। ৯শ টাকা মাত্র। গত দুই দিন আগে ছিল ১৩শ টাকা। বৃষ্টির কারণে শ্রমিকের দাম কমে গেছে।

এই শ্রম বাজার নিয়ে কথা হয় স্থানীয় প্রফুল্ল দাসের(৬০) সাথে। তিনি বলেন, এখানে কলেজ ছিল না। কাঠের একটা ব্রিজ ছিল এখানে। এই ব্রিজের নিচে আমরা মাথায় গামছা বেঁধে কাঁচি, ধানের আঁটি বহনকারী বাঁশের ভার নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতাম। ক্ষেত মালিকরা এসে ধান কাটার জন্য আমাদেরকে নিয়ে যেতো। মজুরি ছিল ২৫ থেকে ৩০ টাকা। ভোর থেকে রাত ৮টা- ৯ টা পর্যন্ত কাজ করতাম।

অরুয়াইল ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভুইয়া বলেন,অনেক পুরনো এই শ্রম বাজার। এখানে যারা বিভিন্ন জেলা থেকে কাজ করতে আসে তাদেরকে শতভাগ নিরাপত্তা দেওয়ার চেষ্টা করি। আমাদের এলাকার মানুষ খুব দরদি মনের অধিকারী। বিদেশী শ্রমিকদের সাথে কোন খারাপ আচার-আচরণ করেন না।

আপনার মন্তব্য লিখুন

আর্কাইভ

September 2023
M T W T F S S
 123
45678910
11121314151617
18192021222324
252627282930  
আরও পড়ুন