সরাইলের বড় হুজুর আল্লামা মোহাম্মদ আলী(রহঃ) এর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী আজ
বার্তা সম্পাদক প্রকাশিত: ১০:২৪ পূর্বাহ্ণ , ৮ ডিসেম্বর ২০২০, মঙ্গলবার , পোষ্ট করা হয়েছে 2 years আগে
এম এ করিম সরাইল নিউজ ২৪.কমঃ
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইল উপজেলার বড় হুজুর ও মালিহাতা মাদ্রাসার সাবেক স্বনামধন্য প্রিন্সিপাল আল্লামা মোহাম্মদ আলী(রহঃ) এর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী আজ মঙ্গলবার(৮ডিসেন্বর)। ২০১৯ সালের এই দিনগত রাত ৭টা ১৫ মিনিটে বার্ধক্যজনিত কারণে সরাইল উপজেলার কুট্টাপাড়া গ্রামের নিজ বাড়িতে ১১৫ বছর বয়সে তিনি ইন্তেকাল করেন। (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। পরদিন বাদ যোহর সরাইল কুট্টাপাড়া খেলার মাঠে লক্ষাধিক মানুষের অংশগ্রহণে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলের শতবর্ষী এ আলেমে দ্বীন ওস্তাজুল ওলামা আল্লামা শাঈখ মোহাম্মদ আলী কাসেমীর জানাজা সম্পন্ন হয়। মরহুমের ওসিয়ত অনুযায়ী জানাযা শেষে মালিহাতা মাদরাসা প্রাঙ্গণে দাফন করা হয়।
সরাইল সদর ইউনিয়নের কুট্রাপাড়া গ্রামের ক্বারী মোঃ আবদুল হেকিমের ৮ সন্তানের মধ্যে তিনি ছিলেন পঞ্চম। তাঁর জীবনের অধিকাংশ সময়ই ইসলামী কর্মকান্ডে ব্যয় করেছেন। অসামাজিক কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে তাঁর লড়াই সংগ্রামের ইতিহাসও সুদীর্ঘ। তিনি দীর্ঘ ৫২ বছর ব্রাহ্মণবাড়িয়া সদর উপজেলার বুধল ইউনিয়নের মালিহাতা মাদরাসার মুহতামিম হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে হাজার হাজার আলেম-ওলামার ওস্তাদ ছিলেন আল্লামা মোহাম্মদ আলী(রহঃ)।
শৈশবকাল থেকেই আল্লামা মোহাম্মদ আলী ছিলেন খুবই বিনয়ী ও শান্ত স্বভাবের। গ্রামের মক্তবে তিনি ক্বারি আনসারিয়ার কাছে থেকে আরবি ফার্সি ও উর্দু ভাষায় ইসলামি শিক্ষার তালিম (পাঠ গ্রহণ) নেন। কিছুদিন সরাইল ফার্সি মাদরাসায় (দেওয়ান বাড়িতে অবস্থিত-পরে বিলুপ্ত) অধ্যয়ন করেন। পরে মালিহাতা গ্রামের বাসিন্দা মাওলানা আবদুল আলী (রহঃ) প্রতিষ্ঠিত জামিয়া ইসলামিয়া তাজুল উলুম মাদরাসায় ভর্তি হন। মালিহাতা মাদরাসায় পাঠ গ্রহণ শেষে ভর্তি হন আল্লামা তাজুল ইসলাম (ফখরে বাঙ্গাল) পরিচালিত ব্রাহ্মণবাড়িয়া জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুসিয়া মাদরাসায় । জামিয়ায় অধ্যয়ন শেষে ১৯৪৫ খ্রি.চলে যান বিশ্বের অন্যতম প্রধান ইসলাম ধর্মীয় শিক্ষালয় ভারতের দারুল উলুম দেওবন্দ মাদরাসায়। অল্প দিনের মধ্যে তিনি তৎকালীন বিশ্ববরেণ্য আলেমে দ্বীন কুতুবে আলম আল্লামা হুসাইন আহম্মদ মাদানীর প্রিয়ভাজন হয়ে ওঠেন। সেখানে তিনি বৃত্তিলাভ করে বিনা খরচে অধ্যয়নের সুযোগ লাভ করেন। সেখানে সর্বোচ্চ সনদ দাওরায়ে হাদীস লাভ করে ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের পর তিনি দেশে ফিরে আসেন। যোগদান করেন ওস্তাদ ফখরে বাঙ্গালের মাদরাসায়। কয়েক মাস পরই ওস্তাদের নির্দেশে ফিরে যান মালিহাতা মাদরাসায়। যোগদানের পর থেকে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি ওই মাদরাসায় প্রতিষ্ঠান প্রধান হিসেবে সাত দশক ধরে অত্যন্ত দক্ষতা নিষ্ঠা ও সততার সাথে দায়িত্ব পালন করেন। একই সময় থেকে তিনি আনসারিয়া মোহাম্মদীয়া ঈদগা মাঠে (কুট্টাপাড়া,খাঁটিহাতা ও বেতবাড়িয়া গ্রামের যৌথ ঈদগা মাঠ) ও খাঁটিহাতা জামে মসজিদে খতিবের দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। একই সাথে ওই ঈদগা মাঠের সভাপতির দায়িত্ব পালন করছিলেন।
তিনি ১৯৮০ সালে দারুল উলুম দেওবন্দ মাদ্রাসায় অনুষ্ঠিত বিশ্বের বড় বড় ওলামাদের সম্মেলনে যোগ দান করেন। ওই বছর তিনি খেলাফত লাভ করেন। দীর্ঘ তিন যুগ পরও তিনি নিজেকে এভাবে উপস্থাপন করেননি। তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন অসংখ্য মসজিদ ও মাদরাসা। তৈরী করেছেন অর্ধলক্ষাধিক আলেমেদ্বীন। হাজার হাজার ওয়াজ ও তফছির মাহফিলে সভাপতিত্ব করেছেন।সুদীর্ঘ বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী আল্লামা শাঈখ মোহাম্মদ আলী অনেক বন্ধুর পথ অতিক্রম করেছেন। অনৈসলামিক কাজের বিরোধীতা করতে গিয়ে ভোগান্তিতে পড়েছেন একাধিকবার। বৃদ্ধ বয়সে কারাবরণও করেছেন।
জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকার সরাইল প্রতিনিধি, সরাইল প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি ও সরাইল মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ মোহাম্মদ বদর উদ্দিন তাঁর পিতা আল্লামা মোহাম্মদ আলী(রহঃ) এর জন্য পরিবারের পক্ষ থেকে সরাইল নিউজ ২৪.কম এর মাধ্যমে সকলের দোয়া কামনা করেছেন।
আপনার মন্তব্য লিখুন