বিপ্লবী উল্লাসকর দত্তের বাড়িটি সরকারিভাবে অধিগ্রহণের গেজেট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ
বার্তা সম্পাদক প্রকাশিত: ৩:৪৩ অপরাহ্ণ , ৩০ মার্চ ২০২৩, বৃহস্পতিবার , পোষ্ট করা হয়েছে 2 months আগে
বিপ্লবী উল্লাসকর দত্তের বাড়িটি সরকারিভাবে অধিগ্রহণের গেজেট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ
এম এ করিম সরাইল (ব্রাহ্মণবাড়িয়া) সংবাদদাতাঃ
ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের অগ্রনায়ক বিপ্লবী উল্লাসকর দত্তের স্মৃতিবিজড়িত ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলার কালিকচ্ছ এলাকার বাড়িটি সরকারিভাবে অধিগ্রহণ করার গেজেট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রনালয় উক্ত বাড়িটি অধিগ্রহনের গেজেট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে। বুধবার বাড়িটির সামনে প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের একটি সাইনবোর্ডও সাঁটানো হয়।
সম্প্রতি বাড়িটি ক্রয় সূত্রে মালিকানা দাবি করা ব্যক্তিগণ বাড়িটির সামনে নতুন করে ভবণ নির্মাণ কাজ শুরু করে এবং ঐতিহাসিক এই বাড়িটি ভেঙ্গে ফেলার পাঁয়তারা শুরু করে। এতে স্থানীয় লোকজনের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হিসেবে জেলা উপজেলার সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠন, স্থানীয় ইতিহাস সংরক্ষণ পরিষদ ও গণমাধ্যম কর্মীরা শতবছরের ইতিহাস ধারণকারী বাড়িটি সংরক্ষণের দাবিতে প্রতিবাদী আন্দোলন গড়ে তুলেন। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার লোকজন দখলের কবল থেকে বাড়িটিকে রক্ষা করে সংরক্ষণের দাবিতে স্থানীয়ভাবে মানববন্ধন পালন ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন। এছাড়া বিপ্লবী উল্লাসকর দত্ত কেন্দ্রীয় স্মৃতি রক্ষা পরিষদ কর্তৃক প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরে বাড়িটি সংরক্ষনের দাবিতে লিখিত আবেদন করা হয়। প্রত্নতত্ব অধিদপ্তর কর্তৃক বাড়িটি পরিদর্শন করা হয়। অবশেষে সরকারীভাবে বাড়িটি অধিগ্রহনের গেজেট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রনালায়। এ খবরে বাড়িটি সংরক্ষণের দাবিতে আন্দোলনকারী বিভিন্ন সংগঠনের নেতা-কর্মী ও স্থানীয় এলাকাবাসীর মাঝে স্বস্থি ফিরে এসেছে।
এ ব্যপারে সরাইল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ সরওয়ার উদ্দীন বলেন, অধিগ্রহণের কাজটি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। আর প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের সাইনবোর্ড সাঁটানোর কথা শুনেছি। তবে কে বা কারা সাঁটিয়েছেন জানি না।
উল্লেখ্য ১৮৮৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৬ এপ্রিল সরাইলের কালীকচ্ছের দত্তপাড়ার এই বাড়িতেই জন্ম গ্রহন করেছিলেন বিপ্লবী উল্লাসকর দত্ত। তাঁর পিতার নাম দ্বিজ দাস। ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে গুরূত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন তিনি। ১৯০৮ খ্রিষ্টাব্দের ২ মে মুরারি পুকুর পাড়ে ব্রিটিশদের হাতে ধরা পড়েন তিনি। ১৯০৯ খ্রিষ্টাব্দে অলিপুর বোমা হামলা মামলায় উল্লাসকর দত্ত ও বারীন ঘোষের ফাঁসীর আদেশ হয়। কিছুদিন পর সাজা পরিবর্তন করে আন্দামানের সেলুলার জেলে যাবতজীবন দ্বীপান্তরের সাজা দেয়া হয় তাঁকে। সেই সেলুলার জেলে উল্লাসকরকে শারীরিক নির্যাতন সইতে হয়। ফলে তিনি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন। ১৯২০ খ্রিষ্টাব্দে মুক্তি পেয়ে তিনি ফিরে যান কলকাতা শহরে। ১৯৩১ খ্রিষ্টাব্দে আবারও গ্রেপ্তার করা হয় তাঁকে। কারাদন্ড দেয়া হয় ১৮ মাসের। ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দে ভারত বিভাগের পর তিনি সরাইলের কালীকচ্ছ গ্রামের দত্তপাড়ায় নিজ বাড়িতে ফিরে আসেন। ১৯৪৮ খ্রিষ্টাব্দে ৬৩ বছর বয়সে উল্লাসকর দত্ত বিশিষ্ট নেতা বিপিন চন্দ্র পালের বিধবা মেয়েকে বিয়ে করেন। ওই বাড়িতে ১০ বছর বসবাসের পর তিনি কলকাতায় যান। জীবনের শেষ সময়টুকু কাটান শিলচরে। ১৯৬৫ খ্রিষ্টাব্দের ১৭ই মে শিলচরেই তিনি শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করেন।
আপনার মন্তব্য লিখুন