১২ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ | ২৮শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

EN

ওসির বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ

বার্তা সম্পাদক

প্রকাশিত: ৪:৪৪ পূর্বাহ্ণ , ৪ মে ২০২০, সোমবার , পোষ্ট করা হয়েছে 5 years আগে

যুগান্তর রিপোর্ট:
লকডাউন পরিস্থিতির মধ্যে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আনসারী হুজুরের জানাজায় লোক সমাগম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতার জন্য থানা পুলিশের নিষ্ক্রিয়তাকে দায়ী করা হয়েছে। বিশেষ করে সরাইল থানার ওসি (সাবেক) শাহাদাত হোসেনের চরম দায়িত্বহীনতার বিষয়টি তদন্ত কমিটির কাছে সুস্পষ্টভাবে প্রমাণিত হয়েছে। এজন্য তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়।

এ প্রসঙ্গে কমিটির প্রধান চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি ইকবাল হোসেন বলেন, ‘আমরা তদন্ত রিপোর্ট জমা দিয়েছি। সদর দফতরের নির্দেশনা ছিল- পুলিশের দায়িত্বে অবহেলা থেকে শুরু করে আইনশৃঙ্খলার অবনতি সংক্রান্ত কতগুলো সুনির্দিষ্ট বিষয় খতিয়ে দেখার। আমরা সেগুলোই উদঘাটনের চেষ্টা করেছি। ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে রিপোর্টে কিছু সুপারিশও করা হয়েছে।’

জানাজায় লোকসমাগম নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থতা খতিয়ে দেখতে চট্টগ্রাম রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজির নেতৃত্বে একটি কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত শেষে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন ইতোমধ্যে সদর দফতরে জমা দেয়া হয়েছে। এতে পুলিশের দায়-দায়িত্ব নিরূপণের পাশাপাশি ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে বেশকিছু সুপারিশ করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, তদন্ত কমিটির অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে আনাসারী হুজুরের জানাজায় লোকসমাগম নিয়ন্ত্রণে আগে থেকেই প্রস্তুতি নেয়া হয়। এজন্য সরাইল থানার ওসির নেতৃত্বে পুলিশের ১১ সদস্যের একটি টিমও গঠন করা হয়। কিন্তু জানাজা অভিমুখে জনস্রোত শুরু হলেও তিনি ঘটনাস্থলে যাননি। জানাজাস্থলে মোতায়েনের জন্য পূর্বনির্ধারিত টিমকেও সেখানে পাঠানো হয়নি।

ঘটনাস্থলে এসআই আনোয়ার হোসেনের নেতৃত্বে মাত্র ২ জন কনস্টেবল মোতায়েন করা হয়। কিন্তু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মাত্র ৩ জনের এই ক্ষুদ্র দলটি কিছুই করতে পারেনি। লাখো মানুষের সমাগম ঘটে যাওয়ার পর পুলিশের কিছুই করার ছিল না। সামগ্রিকভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সম্পূর্ণ ব্যর্থতার পরিচয় দেন সরাইল থানার সাবেক ওসি শাহাদাত হোসেন টিটু। তবে তদন্ত কমিটির কাছে দেয়া জবানবন্দিতে শাহাদাত হোসেন ঘটনাস্থলে উপস্থিত থাকার দাবি করেন। কিন্তু প্রযুক্তির সহায়তায় তার অবস্থান শনাক্ত করা হলে প্রমাণিত হয়- ‘ওসি মিথ্যা বলছেন।’

মূলত তিনি ঘটনাস্থলে যান সন্ধ্যা ৬টার পর। ওসি’র ঘটনাস্থলে অনুপস্থিত থাকার বিষয়ে তদন্ত কমিটির কাছে সাক্ষ্য দেন থানার ১১ জন সদস্য। এছাড়া তার অবস্থান সংক্রান্ত মোবাইল কললিস্ট (সিডিআর) প্রতিবেদনের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তদন্ত সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, চরম দায়িত্ব অবহেলা প্রমাণিত। এ কারণে সরাইল থানার সাবেক ওসি শাহাদাত হোসেনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়া ঘটনার পরপরই তৎকালীন সার্কেল এএসপিকে প্রত্যাহার করা হলেও কর্মস্থলে তিনি নতুন বিধায় তার বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি। পুলিশের জেলা বিশেষ শাখাসহ উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালনে গাফিলতির কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

তদন্ত কমিটির পর্যবেক্ষণ হচ্ছে- ঘটনার দিন সকাল থেকেই পুলিশের তৎপরতা বাড়ানো প্রয়োজন ছিল। কিন্তু তা করা হয়নি। এছাড়া গোয়েন্দা তথ্য সংগ্রহেও ঘাটতি ছিল পুলিশের। বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে যথাযথ যোগাযোগ ছিল না। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা এড়াতে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সঙ্গে তথ্য আদান-প্রদান ও পারস্পরিক সম্পর্ক আরও জোরদারের সুপারিশ করেছে তদন্ত কমিটি।

প্রসঙ্গত, ১৮ এপ্রিল ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আনসারী হুজুরের জানাজায় লাখ মানুষের সমাগম ঘটে। করোনা পরিস্থিতির মধ্যে এ ধরনের জনসমাগম সংক্রমণের ঝুঁকি বহুগুণ বাড়িয়ে দেবে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন বিশেষজ্ঞরা।

আপনার মন্তব্য লিখুন

আর্কাইভ

July 2025
M T W T F S S
 123456
78910111213
14151617181920
21222324252627
28293031  
আরও পড়ুন