অন্যকে বাচাঁতে গিয়ে বিজিএফসিএলের প্লান অপারেটর অগ্নিদগ্ধ সরাইলের ফয়সাল খন্দকারের মৃত্যু। এলাকায় শোক
বার্তা সম্পাদক প্রকাশিত: ১১:০৪ অপরাহ্ণ , ২০ মে ২০১৭, শনিবার , পোষ্ট করা হয়েছে 6 years আগেএম এ করিম সরাইল নিউজ টোয়েন্টি ফোর ডেস্ক:
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার সরাইল উপজেলার সদর ইউনিয়নের সৈয়দটুলা গ্রামের বিশিষ্ট মুরব্বী খোরশেদ আলম খন্দকারের পুত্র, সরাইল উপজেলা যুবদলের সভাপতি নাজমুল আলম খন্দকার মুন্নার ছোট ভাই, উপজেলা সদরের দেওয়ানবাড়ীর বাসিন্দা বাংলাদেশ গ্যাসফিল্ড ব্রাহ্মণবাড়িয়া লোকেশন-১ এর প্লান অপারেটর মো: ফয়সাল খন্দকার অগ্নিদগ্ধ হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে ১৫দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার দিবাগত রাত আনুমানিক ২টা ৫০মিনিটে মৃত্যুবরণ করেছেন।(ইন্না লিল্লাহি….রাজিউন)। অকাল মৃত্যুতে তারঁ পরিবার, বিজিএফসিএল পরিবারসহ গোটা সরাইলে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকা থেকে তাঁর লাশ উপজেলা সদরের তাদের বসতবাড়িতে নিয়ে এলে এক হৃদয়বিদারক দৃশ্যের সৃষ্টি হয়। এক নজর তাকে দেখতে ছুটে আসেন বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। বাদ এশা সরাইল বিকাল বাজার শাহী জামে মসজিদে তাঁর জানাযার নামায অনুষ্ঠিত হয়। জানাযার নামাযে সরাইল বিকাল বাজার শাহী মসজিদের তৃতীয় তলা পর্যন্ত কানায় কানায় পূর্ণ করে মসজিদের সামনের সড়কের দুই দিকে বিশাল লাইনে তাঁর পরিবারের লোকজন, বিজিএফসিএল পরিবারের কর্মকর্তা-কর্মচারীবৃন্দ, সরাইল উপজেলার বিভিন্ন শ্রেণি পেশার লোকজন ও মসজিদের নিয়মিত মুসল্লিবৃন্দ উক্ত জানাযার নামাযে অংশ গ্রহন করেন। জানাযার নামাযে ইমামতি করেন সরাইল বিকাল বাজার শাহী জামে মসজিদের পেশ ইমাম ও খতিব মাওলানা শেখ আমান উল্লাহ। জানাযাপূর্ব সংক্ষিপ্ত আলোচনায় বক্তব্য রাখেন সরাইল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব এডভোকেট মো: আব্দুর রহমান, বিজিএফসিএলের জেনারেল ম্যানেজার(এডমিন) নাসির উজ্জামান তালুকদার, সিবিএ নেতা আব্দুল হামিদ, সরাইল বিকাল বাজার শাহী জামে মসজিদের সভাপতি মাওলানা কুতুব উদ্দিন, মৃত ফয়সাল খন্দকারের পিতা খোরশেদ আলম খন্দকার, বড় ভাই উপজেলা যুবদলের সভাপতি নাজমুল আলম খন্দকার মুন্না। জানাযা শেষে তাঁকে সৈয়দটুলা গ্রামের বাড়িতে পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হয়েছে। বিজিএফসিএল ও মৃত ফয়সালের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ৫মে ফয়সাল খন্দকার বিজিএফসিএলের ব্রাহ্মণবাড়িয়া লোকেশন-১ এ যথাসময়ে কর্মস্থলে যান। সকাল সাড়ে ১০টায় বিজিএফসিএলের ফোরম্যান আলমগীর সরকার(৫৫) ইলেক্ট্রিক হিটারে জোট শুকানোর সময় জুটে আগুন লাগে। এ থেকে আলমগীর সরকারের শার্টে ও পাশে থাকা প্লাস্টিকের বালতিতে থাকা পেট্রোলে আগুন ধরে যায়। একটু দূরে কর্মরত ফয়সাল খন্দকার আলমগীর সরকারকে বাঁচাতে দৌড়ে এসে পাশের বাথরুম থেকে একবালতি পানি এনে আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। দ্বিতীয়বার দৌড়ে গিয়ে বাথরুমে পানি আনতে গেলে জ্বলন্ত পেট্রোলের বালতিটি বাথরুমে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে আলমগীর সরকার বাথরুমের দরজা বন্ধ করে দেন। এসময় বাথরুমের চতুর্দিকে আগুন ছড়িয়ে পড়লে বাথরুমে পানি আনতে যাওয়া ফয়সাল খন্দকার কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে বাথরুমের খোলা ব্যান্টেলিটেড দিয়ে বাইরে বেরিয়ে অচেতন হয়ে পড়েন। এসময় ফয়সাল খন্দকারে দুই হাত, দুই পা ও অর্ধেক বুকসহ শরীরে বিভিন্ন অংশ পুড়ে যায়। স্থানীয় লোকজন প্রথমে তাকে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত ডাক্তার তাকে ঢাকা মেডিকেলে প্রেরণ করেন। সেখানে তিনি ১৫দিন মৃত্যুর সাথে ১৫দিন পাঞ্জা লড়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন। এ ঘটনায় বিজিএফসিএলের ফোরম্যান আলমগীর সরকারকে বরখাস্থ করেছেন বিজিএফসিএল কর্তৃপক্ষ। মৃত্যুকালে তিনি ৩দিনের একমাত্র কন্যাসন্তান, স্ত্রী, পিতা, মাতাসহ অসংখ্য আত্বীয়-স্বজন ও গুণগ্রাহী রেখে গেছেন। তাঁর মৃত্যুতে বিজিএফসিএলের কর্মকর্তা-কর্মচারী, এলাকার জনপ্রতিনিধি, বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দসহ এলাকার বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার লোকজন শোক প্রকাশ করে শোকসন্তপ্ত পরিবারবর্গের প্রতি সমবেদনা জানিয়েছেন।
আপনার মন্তব্য লিখুন