১৬ই এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ | ৩রা বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ

EN

হিংসা-প্রতিহিংসার অনলে হুমকির মুখে সরাইলে রাজনৈতিক নেতৃত্ব, এলাকার উন্নয়নে অশনি সংকেত

বার্তা সম্পাদক

প্রকাশিত: ৭:০৫ অপরাহ্ণ , ২৬ জুলাই ২০২০, রবিবার , পোষ্ট করা হয়েছে 4 years আগে

এম এ করিম সরাইল নিউজ ২৪.কমঃ

ইতিহাস ঐতিহ্যের ধারক ও বাহক ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সরাইলে হিংসা-প্রতিহিংসার অনলে হুমকির মুখে রয়েছে রাজনৈতিক নেতৃত্ব। অবস্থার প্রেক্ষিতে এখানকার উন্নয়ন কর্মকান্ডে অশনি সংকেত বিরাজ করছে। ভিন্ন ভিন্ন রাজনৈতিক দলের ভিন্ন ভিন্ন মতাদর্শের নেতা-কর্মীদের মাঝে দলীয় সম্প্রীতি বিরাজমান থাকলেও এখানে বড় দুটি দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির দলীয় অভ্যন্তরীণ গ্রুপিং কোন্দল ও এলাকাভিত্তিক প্রভাব বিস্তারের হীণ প্রবণতায় হুমকির মুখে রয়েছে নেতৃত্ব। বিএনপি দলে নেতা-কর্মীদের মাঝে পদ পদবী ভাগিয়ে নেওয়ার ঠান্ডা গ্রুপিং কোন্দল থাকলেও আওয়ামী লীগ দলের অভ্যন্তীণ কোন্দল এখানে প্রকাশ্যে বিবাদমান। অনুসন্ধানে জানা যায়, দলীয় অভ্যন্তরীণ কোন্দলে ২০১২সালে হিংসার বলি হয়েছেন সরাইলের সবচেয়ে পরিচ্ছন্ন ও ক্লিন ইমিজের একজন ধার্মিক ও জনপ্রিয় আওয়ামী লীগ নেতা এ কে এম ইকবাল আজাদ। হত্যা মামলায় আসামী করা হয়েছে আওয়ামী লীগ দলীয় অর্ধ-শত নেতা-কর্মীকে। এই হত্যাকান্ডের পর থেকেই শান্ত সরাইল হয়ে উঠেছে অশান্ত। সরাইলের ইতিহাসে হানা দিয়েছে রাজনৈতিক হত্যাকান্ড।
প্রিয় বড় ভাই এর শোকে কাতর প্রয়াত এ কে এম ইকবাল আজাদের ছোট ভাই প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আজাদ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে অকালেই চলে গেলেন না ফেরার দেশে।
সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের তৃণমূল রাজনীতি থেকে উঠে আসা ও উপজেলার কুট্টাপাড়া গ্রামের কৃতি সন্তান আলহাজ্ব রফিক উদ্দিন ঠাকুর এর বিরুদ্ধে সম্প্রতি বিভিন্ন প্রকল্প কাজে দুর্নীতির অভিযোগে জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত আবেদন করেছেন কুট্টাপাড়া গ্রামের বাসিন্দা শ্রমিক লীগ নেতা শেখ আবুল কালাম ও সৈয়দটুলা গ্রামের বাসিন্দা যুবলীগ নেতা মোঃ মোশারফ হোসেন। অভিযোগ হয়েছে, তদন্ত হবে, দোষী-নির্দোষ যাচাই হবে কিন্তু তার আগেই শুরু হয়ে গেছে বিভিন্ন মহলে হিংসা-প্রতিহিংসার আলোচনা-সমালোচনার বহিঃপ্রকাশ। কিন্তু এ ব্যপারে সরাইল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে দুইবার নির্বাচিত আলহাজ্ব রফিক উদ্দিন ঠাকুর নিজেকে সম্পূর্ণ নির্দোষ দাবি করে বলেছেন সরাইলের উন্নয়নে তিনি শতভাগ ফেয়ার থেকে কাজ করে যাচ্ছেন। তাঁর জনপ্রিয়তায় ঈর্ষান্বিত হয়ে একটি কুচক্রী মহল প্রতিহিংসার বশবর্তী হয়ে রাজনৈতিকভাবে তাঁকে বিতর্কিত করার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছেন তবে তদন্তের মাধ্যমে তাঁর সততা প্রমাণ করার জন্য তিনি প্রস্তুত রয়েছেন বলে তিনি বিবৃতি দিয়েছেন। আওয়ামী লীগ নেতা এ কে এম ইকবাল আজাদ হত্যা মামলার আসামী হয়েও তৃণমূলের জনপ্রিয়তায় আলহাজ্ব রফিক উদ্দিন ঠাকুর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দ্বিতীয় দফায় সরাইল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে এলাকার শিক্ষাঙ্গন ও সামাজিক বিভিন্ন অবকাঠামোগত নানাবিধ উন্নয়নে প্রশংসনীয় ভূমিকা রাখছেন তবে প্রতিহিংসা যেন পিছু লেগেই রয়েছে তাঁর। প্রথমবার উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান থাকাকালে নিজ গ্রামে দুই পক্ষের সংঘর্ষে প্রতিপক্ষের হামলায় প্রতিহিংসার বলি হয়েছেন তাঁর ছোট ভাই আনিস উদ্দিন ঠাকুর।
এদিকে প্রয়াত এ কে এম ইকবাল আজাদ হত্যা মামলার আসামী হওয়ার পর থেকে
সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগ এর রাজনীতিতে বিশেষ ভূমিকা পালনকারী সাবেক সভাপতি ও এমপি পদে দুই বার আওয়ামী লীগ দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্ত উপজেলার নোয়াগাঁও ইউনিয়নের কৃতি সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল হালিম
শারীরিকভাবে অসুস্থতাজনিত কারনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। একই মামলার আসামী নোয়াগাঁও গ্রামের সাবেক চেয়ারম্যান আওয়ামী লীগ নেতা মোঃ সাদেক মিয়াও শারীরিকভাবে অসুস্থতা জনিত কারনে নিজ বাড়িতেই চিকিৎসাধীন রয়েছেন। একই মামলার আসামী সদর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও সৈয়দটুলা গ্রামের কৃতি সন্তান আওয়ামী লীগ নেতা মোঃ ইদ্রিছ আলী শারীরিক অসুস্থতাজনিত কারনে নিজ বাড়িতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। একই মামলার আসামী একই গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সরাইল উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স এর সাবেক কমান্ডার আওয়ামী লীগ নেতা মোঃ ইসমত আলী শারীরিকভাবে অনেকটা অসুস্থ হয়ে বেশিরভাগ সময় নিজ বাড়িতেই অবস্থান করছেন। এছাড়া একই মামলার আসামী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার ও নিজ সরাইল গ্রামের বাসিন্দা আওয়ামী লীগ নেতা মোঃ আনোয়ার হোসেনও বেশির ভাগ সময় নিজ বাড়িতেই অবস্থান করছেন। একই মামলার আসামী সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগ এর সাবেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সৈয়দটুলা গ্রামের কৃতি সন্তান মোঃ আব্দুল জব্বার তৃণমূলের জনপ্রিয়তায় সদর ইউনিয়নে ২বার ও সর্বশেষ স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে ১বারসহ টানা মোট ৩বার সদর ইউপির চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। প্রতিহিংসার কবলে একদিকে সরাইল হারিয়েছে এ কে এম ইকবাল আজাদের মত জনপ্রিয় একজন নেতাকে অপর দিকে এই মামলায় আসামী হওয়ার মাধ্যমে সরাইলে বিভিন্ন সময়ে জনকল্যাণে কাজ করা বহু নেতার নেতৃত্ব রয়েছে হুমকির মুখে।
এদিকে আওয়ামী লীগ নেতা এ কে এম ইকবাল আজাদ হত্যাকান্ডের পর স্বামী হারানোর বেদনা নিয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগ এর রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে উঠেন প্রয়াত এ কে এম ইকবাল আজাদের সহধর্মিনী উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম শিউলি আজাদ। ধীরে ধীরে আওয়ামী রাজনীতিতে সরাইলে জনপ্রিয় হয়ে উঠেন আওয়ামী লীগ নেত্রী উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম শিউলি আজাদ। পরবর্তীতে এডভোকেট নাজমুল হোসেনকে আহবায়ক ও উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম শিউলি আজাদকে যুগ্ম আহবায়ক-১ করে সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগ এর আহবায়ক কমিটি গঠন করা হয়।
রাজনৈতিক মেধা ও প্রজ্ঞায় দলীয় প্রধান ও সরকার প্রধান এর আস্তাভাজন হিসেবে উপজেলা আওয়ামী লীগ এর যুগ্ম আহবায়ক-১ উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম শিউলি আজাদ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সংরক্ষিত মহিলা আসনের এমপি নির্বাচিত হয়েছেন।
এদিকে প্রয়াত এ কে এম ইকবাল আজাদের অনুসারী এডভোকেট আশরাফ উদ্দিন মন্তু ও মোঃ শের আলম মিয়া পরবর্তীতে উপজেলা যুবলীগের নেতৃত্বে উঠে আসেন। উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মোঃ শের আলম মিয়া উপজেলা পরিষদের ভাইস-চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পরবর্তী সময়ে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দীতা করে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেন। আর উপজেলা যুবলীগের সভাপতি এডভোকেট আশরাফ উদ্দিন মন্তু দলীয় কর্মকান্ড চালানোর পাশাপাশি এমপি পদে দলীয় মনোনয়নের জোর প্রচেষ্টা চালান। এলাকা ভিত্তিক রাজনৈতিক বলয় ও দলীয় গ্রুপিং কোন্দলে এই দুই তরুন নেতাও প্রতিহিংসার কবলে পড়েন বলে অনেকে মনে করেন। সম্প্রতি উপজেলার সদর ইউনিয়নের বেপারিপাড়ার কৃতি সন্তান ও আওয়ামী লীগ নেতা আবু বকর সিদ্দিক ওরফে রকেট মেম্বার হত্যা মামলার আসামী হিসেবে মোঃ শের আলম মিয়া এলাকা ছেড়ে আত্ব গোপনে রয়েছেন। এই হত্যাকান্ডের প্রায় ৪মাস পর অভিযোগ পত্রে(চার্জশীটে) নতুন করে আসামী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন এডভোকেট আশরাফ উদ্দিন মন্তু। সম্প্রতি দলীয় শৃংখলা ভঙ্গের দায়ে উপজেলা যুবলীগের সেই কমিটি বিলুপ্ত ঘোষনা করেছেন দলীয় হাই কমান্ড। একদিকে প্রতিহিংসার বলি হয়েছেন রকেট মেম্বার এর মত একজন জনপ্রিয় নেতা অন্যদিকে এই মামলার প্রধান আসামী একই এলাকার বর্তমান শাহ আলম মেম্বার, যুবলীগ নেতা এডভোকেট আশরাফ উদ্দিন মন্তু ও যুবলীগ নেতা মোঃ শের আলম মিয়াসহ অন্যান্য আসামীদের বাড়ি ছাড়া হয়ে থাকতে হচ্ছে। এদিকে সাবেক অতিরিক্ত সচিব ও সরাইলের কৃতি সন্তান ফরহাদ রহমান মাক্কি আওয়ামী রাজনীতিতে উপজেলা সভাপতি হওয়ার দৌড়ঝাঁপ শুরু করলে রাজাকারের উত্তরসুরীর ধোঁয়া তুলে তাঁকে রাজনৈতিকভাবে বিতর্কিত ও ঘায়েল করার অপচেষ্টা করে একটি মহল যার প্রভাবে প্রশ্নবিদ্ধ তাঁরই সূর্য সন্তান, সরাইলের আরেক গর্ব ও বর্তমান সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী ব্যরিস্টার শাহ আলী ফরহাদ।
ইতিহাস ঐতিহ্যে ঘেরা শান্তিপূর্ণ সরাইলে বহু জ্ঞানী গুনীর জন্ম হয়েছে। দেশ বিদেশে বিচরণ করছেন এই এলাকার বহু কীর্তিমান মানুষ। প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে রাজনৈতিক হত্যাযজ্ঞের মাধ্যমে নিজ জন্মভূমি সরাইলের সুনাম ক্ষুন্ন হউক এটা কোনোভাবেই কামনা করেন না তাঁরা। আর কোনো রাজনৈতিক হত্যাকান্ডের পুনরাবৃত্তি দেখতে চান না সরাইলবাসী। হত্যাকারী যতবড় শক্তিশালী হউক আইনের মাধ্যমে হত্যাকান্ডের সুষ্টু ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্থি নিশ্চিৎ হউক এটা সকলের কামনা। এছাড়া উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় কাউকে হত্যামামলায় আসামী না করে কেবল প্রকৃত অপরাধীদের শাস্থি নিশ্চিৎ করার মাধ্যমে শান্তির সরাইল গঠনে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার দাবি জানিয়েছেন শান্তি প্রিয় সরাইলবাসী। সম্প্রীতির বন্ধন অটুট থাকুক, হিংসা ও প্রতিহিংসা নিপাত যাক, নেতৃত্ব শুণ্য নয়, সরাইলে সৎ ও গুনী নেতৃত্ব সৃষ্টি হউক” এমনটাই হউক সকলের প্রত্যাশা।

আপনার মন্তব্য লিখুন

আর্কাইভ

April 2024
M T W T F S S
1234567
891011121314
15161718192021
22232425262728
2930  
আরও পড়ুন